মডেল রাউধা হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ

রাজশাহী প্রতিনিধি

মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের হত্যা মামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজশাহীর মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মহিদুর রহমান শুনানি শেষে এই আদেশ দিয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম বলেন, ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি তিনি মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে মামলার রিভিশন আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল আদালতে রিভিশনের আবেদন মঞ্জুর হয়। সেদিন আদালত নিম্ন আদালতে বাদীর নারাজি আবেদন দাখিলের অনুমতি দেন।

এরপর ২৯ জুন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ বাদীর নারাজি আবেদন দাখিল করা হয়। এরই শুনানি অনুষ্ঠিত হলো মঙ্গলবার। শুনানির আগে আদালত মামলার বাদী ডা. মোহাম্মদ আতিফের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে শুনানি শেষে মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। আদেশের কপি দ্রুতই আদালত থেকে রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনারের কাছে পাঠানো হবে।

মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আতিফ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থীদের হোস্টেল কক্ষ থেকে রাউধার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ যখন মরদেহটি উদ্ধার করে তখন সেটি বিছানার ওপর ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাউধা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। পুলিশ যাওয়ার আগেই দরজা ভেঙে মরদেহটি নামানো হয় বলেও কর্তৃপক্ষের দাবি।

তবে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফের দাবি, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাই তিনি রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে ময়নাতদন্ত শেষে রাউধার মরদেহ রাজশাহীতে দাফন করা হয়। হত্যা মামলা করার পর কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।

পরে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর শাহ মখদুম থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার আলী তুহিন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক আসমাউল হক আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এতে নারাজি দেন রাউধার বাবা। আদালত তা গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান ২০১৯ সালের ১৮ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি থাকার কথাই উল্লেখ করেন।

আর তার নিজের তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করেন যে, মামলার আসামি সিরাত পারভীনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত মামলাটি নথিজাত করেন।

এতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবারও মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। এর শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী ডা. মোহাম্মদ আতিফ বলেন, আমি নিশ্চিত যে রাউধা আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তদন্ত প্রভাবিত করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। তাই আবারও নারাজি দাখিল করেছিলাম। আদালতের এ আদেশের মাধ্যমে নথিজাত হওয়া একটা ‘মৃত’ মামলা পুনরুজ্জীবিত হলো।

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.