স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে টিআই কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার

বরগুনায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় স্বামী রতন বণিক (৪০) কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৩১ মে) এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি। অভিযুক্ত রতন বরগুনা শহরের ব্যবসায়ী গ্রীন রোড এলাকার বাসিন্দা বাবুল বণিকের ছেলে। তিনি কমলাপুরে কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠান আইসিডির ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত।

এ ব্যাপারে আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি জানান, সোমবার বিকালে মামলার সকল আসামিরা বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার জগদীশ বণিকের মেয়ে বিথী বণিকের সঙ্গে বরগুনা শহরের ব্যবসায়ী বাবুল বণিকের ছেলে রতন বণিকের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক দেওয়া হয়। বিয়ের দুই বছর নির্বিঘ্নে কাটলেও এরপর থেকে পুনরায় যৌতুকের জন্য মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। ঢাকায় থাকার সময় বিথীকে মারধর ও মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা মারায় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য বিথীকে মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি একাধিকবার কাউন্সেলিং করানো হয়। সুস্থ হলে ঢাকার বাসা ছেড়ে কয়েক মাস আগে বিথীকে বরগুনায় শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন রতন। বরগুনায় বসতঘর ভেঙে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন তারা। এ জন্য ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু বিথী অস্বীকৃতি জানালে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হয়।

এর জের ধরে ১১ মে বিথীকে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে বেদম মারধর করেন। এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যাচেষ্টা চালান তারা। এ সময় বিথীর ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। প্রতিবেশীরা ওই বাড়ির দরজা খুলতে বললে বিথীর স্বামী-শ্বশুর দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে সেখানে আরও লোকজন জড়ো হলে চাপের মুখে তারা দরজা খুলে দেন। তখন শোয়ার ঘরের মেঝেতে বিথীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে বরিশালে স্থানান্তর করেন।

এ ঘটনায় ১৬ মে রাতে বিথীর মা করুনা বণিক বাদী হয়ে বরগুনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় বিথীর স্বামী রতন বণিক, শ্বশুর বাবুল বণিক, শাশুড়ি গীতা রানী বণিককে আসামি করা হয়। ওই মামলায় সোমবার বিকালে সকল আসামিরা আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এদিকের বিথীর সংসারে সাত বছর বয়সী এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বিথী চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের নানী ও ফুফির জিম্মায় দিয়েছেন আদালত এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ জানান, আদালতের নির্দেশে আসামিদের বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.