হাফেজ মুফতি জাহিদুল ইসলাম(বেলাল)
থার্টিফাস্ট নাইট উন্মাতালভাবে পচ্শিমা সমাজে পালিত হয়। বাংলাদেশেও এটি এখন ঘটা করে শহড় থেকে গ্রামগন্জে পালিত হচ্ছে। রাত বারটা বাজার সাথে সাথে আতশবাজি, নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়, উন্মত্ততা শুরু হয়। নতুন পোশাক, ভাল খাবার, বিভিন্ন স্পটে ঘুরতে যাওয়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদির মধ্যদিয়ে পালিত হয় ইংরেজী নববর্ষ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও ইসলাম।
নববর্ষের শুরু হয় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২-টা ০১ মিনিটে। আর তখন থেকেই শুরু হয় আতশবাজি, বাদ্য-বাজনা, নাচ-গান, যুবক-যুবতীর ফ্রি স্টাইল ফূর্তি। উল্লাস আর বেলেল্লাপনায় কেটে যায় সারাটি রাত। রাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টিকে তারা টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে সে সময়টিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে অভাবীকে, অসুস্থকে, ক্ষমাপ্রার্থনাকারিকে যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে দেন। [মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৩।] মহান স্রষ্টার আহবানকে উপেক্ষা করে যারা শয়তানের আহবানে রাত জাগে, তাদের পরিণাম আল্লাহর কাছে কি-ই বা হবে।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবক-যুবতীদের অবিমিশ্রণ জাহেলিয়াতকেও হার মানায়। নারী নগ্নতার এই অপসংস্কৃতি দেশকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছে নিম্ন সংস্কৃতিতে। নতুন প্রজন্মের জন্য চরিত্রবান মায়ের সংকট তৈরী করছে তারা। রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেছেন- দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী রয়েছে, যাদের আমি এখনও দেখিনি। এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরু পরিচালনা করার লাঠি থাকবে। তা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী, যারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ উহার সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়’।[মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪।]?
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন: “নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি। এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”(আল-মায়িদাহ, ৫:৭২)
হে মুমিন ভাইয়েরা!
একটু কল্পনা করুন, নতুন বছরের কি মূল্য থাকবে যদি প্রাণপাখী পাঞ্জর ভেঙ্গে বেরিয়ে যায় পুরাতন বছরে? শুভকামনায় প্রতিটি নববর্ষ উদযাপন করে পুরাতন বছর থেকে নতুন বছর কিছুটা এগিয়েছে কি? তবে কি স্বার্থকতা রয়েছে এই উদযাপনে? সুতরাং আমাদের আহবান- আল্লাহ জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে বেশী সুন্দর আমল করতে পারে (মুলক ২)। আসুন, আমরা আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। যে উৎসব পৌত্তলিক-খৃষ্টান সমাজ গ্রহণ করেছে তাকে কেন আমরা বর্জন করছি না? রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেছেন যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ করল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল’।[আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭, সনদ হাসান]
হে অভিবাবক সচেতন হোন!
আদরের সন্তানকে যে বয়সে আপনি রশি ছেড়ে রেখেছেন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করতে, সে বয়সে মুস‘আব বিন উমাইর [রা.] গিয়েছেন ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হতে। সচেতনতার অভাবে যদি আপনার সন্তান নষ্ট হয় তবে আপনি ব্যর্থ অভিভাবক। জেনে রাখুন! রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেছেন তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫]
সুতরাং আসুন! সেদিন আসার আগেই আমরা সচেতন হই, যেদিন আমার সন্তান আমার জান্নাতে যাওয়ার জন্য বাধা হয়ে দাড়াবে।
পরিশেষে বলতে চাই।
তুমি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ এবং তোমার পরিবারকেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাঁও।
লেখক-
ইমাম ও খতিব কালেক্টরেট (ডিসি কোর্ট) জামে মসজিদ বরগুনা।
ও
ধর্মীয় শিক্ষক, বরগুনা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ।