স্টাফ রিপোর্টার
মাদকের মামলা থেকে বাঁচতে নিত্য নতুন নাটক করছে সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য গাঁজা সহ গ্রেফতার হওয়া কাওসার’র বড় ভাই ফেরদৌস (বাবু)।
ঘটনার দিন দুপুরের দিকে নিজের ভাইকে বাঁচাতে সীমান্ত বাবু নামে নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে নিজের ঘরের চালে আগুন ধরিয়ে সাধারণ মানুষের চোখে ভিন্নতা আনার চেষ্টা চালায়। এছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ভাইরাল করে আসছে।
জানা গেছে, জাল-জালিয়াতির দায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে বরখাস্ত হন ফেরদৌস। এরপর থেকেই নিজ এলাকা বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়িতে বসবাস করে আসছে ফেরদৌস।
অন্যদিকে, পুলিশ তদন্ত করে কাওসার মাদকের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এবং মাদক থেকে নিজের ছোট ভাইকে বাঁচাতে ঘরে আগুন দেয়ার বিষয়টি একটি বানোয়াট হওয়ায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার আব্দুস ছালাম সংবাদ সম্মেলন করেন।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাওসার প্রায়ই এম্বুলেন্স যোগে বাড়িতে আসতো। কিন্তু সবসময়ই রাতের বেলায় আসতো। এমনকি আটক হওয়ার আগের দিন রাতে গাড়িতে করেই বাড়িতে এসেছিল।
আমড়াঝুড়ি এলাকার স্থানীয় অধিবাসী জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, কাওছাড় বরিশাল থেকে প্রায়ই এম্বুলেন্সে করে বাড়িতে আসতো। এবং সবসময়ই সে রাতে বাড়িতে আসতো। গাঁজাসহ যেদিন আটক হয়েছে তার আগের দিন গভীর রাতেও সে এম্বুলেন্সে বাড়িতে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, এলাকায় ভদ্রবেশে চলাফেরা করলেও রাতে এম্বুলেন্সে করে মাদক নিয়ে এসে এলাকায় অবস্থান করে তা বিক্রি করতো কাওছাড়।
গ্রেফতার হওয়া কাওছার ডিবি পুলিকে জানান, তিনি ছুটি নিয়ে বরগুনায় তার বাড়িতে এসেছে। তবে বরিশাল জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই (সঃ)/১৭৬ মোঃ বাদল হোসেন স্বাক্ষরিত বরিশাল পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত একটি আবেদন পত্রে সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য মোঃ কাওছাড় ১১ ফেব্রুয়ারি রোলকলে উপস্থিত ছিলেন না বলে উল্লেখ করে অবহিত করেন।
সাময়িক বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্য কাওসারের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় পরকীয়া প্রেমের দায়ে গত বছর ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখে একটি মামলা করা হয়। মামলা নং-৫৬।
ওই মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে নিজেকে বাঁচাতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে গত বছর ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীতে ঝাঁপ দেয় কাওছার। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়।
উল্লেখ্য, বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আমড়াঝুড়ি এলাকা থেকে সাময়িক বরখাস্তকৃত কাওছাড়কে ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে ১২ টার দিকে দুই কেজি গাঁজা সহ গ্রেফতার করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।
এ বিষয়ে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য মোঃ কাওছাড়ের ভাই বাবুর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম খান বলেন, মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘরে আগুন দেন বিজিবি থেকে চাকরিচ্যুত কাওছাড়ের ভাই বাবু। বরিশাল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়াই কাওছাড় বরগুনা আসে। মূলত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারনেই সে অনুমতি ছাড়াই বরগুনা আসে মাদক বিক্রির জন্য।
তিনি আরো বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাঁজাসহ গ্রেফতারের পর কাওছাড় যে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য তা আমরা জানতে পারি। কাওছাড়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের পর আদলতে হাজির করলে, আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।