জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা
আওয়ামী লীগের অনুভূতির সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই তাদেরকে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব প্রদান আত্মঘাতী ও বিপদজনক বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাসহ পদবঞ্চিত নেতৃবৃন্দ।
গত ১৫ আগস্ট বরগুনায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দের আয়োজনে শনিবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দায়ী করেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব আবদুর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। এ কারনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসের পাশাপাশি আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তাই অতিসত্বর অগঠনতান্ত্রিক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ মকবুল।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রলীগের দুটি অংশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার প্রেক্ষাপটে কে বা কারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে, সেই অপরাধের প্রতিকারে আইনসম্মত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ছাত্র জীবনে ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত একজন এডিশনাল পুলিশ সুপার আওয়ামী লীগের সভাপতি, পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বরগুনার গণমানুষের নেতা, সাবেক উপমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু’র সাথে চূড়ান্ত অসাধাচারণ করে এবং জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতাদের চোখের সামনে ছাত্রলীগের নিরীহ কর্মীদের রক্ত জখম করে।
পরবর্তীতে বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীদের উপর পূনরায় ও পুলিশ সদস্যরা পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করে। পুলিশের নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে বরগুনাসহ সমগ্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনসাধারণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বরগুনায় বিগত ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়, যেখানে সমস্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, দায়ী পুলিশ সদস্যের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের তথাকথিত নবগঠিত কমিটির সভাপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে নিপীড়নকারী পুলিশ সদস্যদের অভিনন্দন জানান এবং তথাকথিত সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাদের পিটানো হয়েছে তারা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে মন্তব্য করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যেখানে বরগুনাসহ সমগ্র বাংলাদেশের নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, সেখানে তথাকথিত এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাদের মিশন বাস্তবায়ন করতে সাবেক ছাত্রদল নেতা এডিশনাল পুলিশ সুপারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে! যেখানে ছাত্রলীগের শতাধিক কর্মী নির্যাতনের শিকার হন সেখানে তথাকথিত পকেট কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমগ্র আওয়ামী পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে!
নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৭ জুলাই ছাত্রলীগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র, দীর্ঘদিনের রীতি নীতি বিধি-বিধান উপেক্ষা করে কোন প্রকার কাউন্সিল অধিবেশন না করে কিংবা সাংগঠনিক কোন ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় চলে যান।
সাংগঠনিকভাবে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেনের পরামর্শ অজ্ঞাত কারণে তারা উপেক্ষা করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে ৫ দফা নির্দেশনা অমান্য করে এই প্রেক্ষাপটে বরগুনা আওয়ামী পরিবারের সবাইকে হতভাগ করে দিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত জামাতপন্থী পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি তথাকথিত তেত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ কমিটি বিগত ২৪ জুলাই রাতে প্রকাশ করে কেন্দ্র। যাতে স্থান পেয়েছে নিজ সংগঠনের কর্মী হত্যা মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক মামলার আসামি। এই কমিটির সাথে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ এবং এতদিন ধরে যারা বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কেউই সামান্যতমও যুক্ত নন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যাকে সভাপতি হিসেবে পদ প্রদান করা হয়েছে তিনি ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের কোন স্তরের কোন পদে দায়িত্ব পালন করেননি এবং বরগুনার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার ছাত্রত্ব নেই। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ দেয়া হয়েছে যাকে তার পরিবার জামাত-বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। এখনও তিনি বিএনপি’র এক নেতার বাসায় থাকেন এবং বিএনপির আশ্রয় প্রশ্রয় চলাফেরা করেন। তার পিতা জামাতে ইসলামীর সাথে সরাসরি জড়িত। জাতীয় শোক দিবসে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় দুঃখের দিনে শোক র্যালির নামে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র সজ্জিত হয়ে তান্ডব চালিয়ে এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের অনুভূতির সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই তাদেরকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব প্রদান আত্মঘাতী ও বিপদজনক। এই কারণেই বরগুনার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আস্থার সর্বশেষ ঠিকানা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নেতৃবৃন্দ অতি দ্রুত ঘোষিত এই কমিটি বাতিল করে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করে দেয়ার এবং প্রকৃত আওয়ামী লীগের অনুভূতি ধারণ করে এমন যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে নতুন কমিটি করার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বরগুনা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মকবুল, জুবায়ের আদনান অনিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, গোলাম মোস্তফা কিসলু, মোঃ আলমগীর হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।