এম.এস রিয়াদ
বরগুনায় অতি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে এনজিও সংগ্রাম।
পিকেএসএফ ও সংগ্রাম’র অর্থায়নে বুধবার (৩ আগস্ট) সংগ্রাম প্রধান কার্যালয়’র হলরুমে আয়োজিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অতি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ২৮ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লক্ষ্য ৩৬ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বরগুনা সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মতিউর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংগ্রাম’র প্রতিষ্ঠাতা চৌধূরী মোহাম্মদ মাসুম, সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রী কলেজ’র অধ্যক্ষ ও বরগুনা জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ জিয়াউল করিম।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সংগ্রাম’র নির্বাহী পরিচালক আলহাজ্ব চৌধূরী মুনীর হোসেন’র সভাপতিত্বে ও সংগ্রাম’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মাসউদ সিকদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের স্কুল পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টু, সংগ্রাম’র উপনির্বাহী পরিচালক আলহাজ্ব চৌধূরী মোহাম্মাদ মঈন, পরিচালক (ঋণ) মোঃ হুমায়ুন কবির, জোনাল ম্যানেজার ফয়সাল আহমেদ, মিডিয়া অফিসার আরিফ মিয়া, মিডিয়া অফিসার ও দৈনিক স্বাধীন বাণী পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোঃ সানাউল্লাহ রিয়াদ।
এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর ২য় বর্ষের ছাত্র মোঃ ইসমাইল, পাথরঘাটা ডিগ্রী কলেজ’র একাদশ শ্রেণী পড়ুয়া নিশাত জাহান ছাদিকা বক্তব্য রাখেন।
সংগ্রাম (সংগঠিত গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি)। এটি উপকূলীয় অঞ্চলে কর্মরত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বরগুনা জেলাধীন পাথরঘাটা উপজেলায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
উপকূলীয় তৃণমূল পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংস্থাটি দেশ-বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে সংগ্রাম বরিশাল বিভাগের সব কটি জেলায় নিবিড় ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সংগ্রাম ২০১২ সাল থেকে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় পরিচালিত অতি দরিদ্র পরিবারের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০-৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করে আসছে।
প্রথম দফায় শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল নিয়ে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হলে তাদের আবারও দ্বিতীয় দফায় বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। একই সাথে সংগ্রাম নিজস্ব অর্থায়নে অতি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যানরত আছে তাদের জন্য “বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি” কার্যক্রম শুরু করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় পিকেএসএফ এর অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৪৭২ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৫ লক্ষ্য ৭৯ হাজার টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে “বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষাবৃত্তির” লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ১ লক্ষ্য ৬৬ হাজার টাকা প্রদান করেছে। এ নিয়ে মোট ৫০১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে।
২০১২ সাল থেকে সংস্থার বৃত্তি টাকা পেয়ে অতি দরিদ্র পরিবারের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় রয়েছে। অনেকে ভালো ফলাফলের মধ্য দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর এই অগ্রযাত্রায় পৃষ্ঠপোষকতা করতে পেরে সংগ্রাম পরিবার কৃতার্থ মনে করছে। সংগ্রাম ভবিষ্যতে এই অগ্রযাত্রা আরো বেগবান করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
বিশেষ অতিথি অধ্যক্ষ জিয়াউল করিম বলেন, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়ে সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর ফলে বাধা পেরিয়ে তারাও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রেখে নিজেকে একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
সংগ্রাম’র প্রতিষ্ঠাতা চৌধূরী মোহাম্মদ মাসুম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষার মূল্যায়ন করতে এবং অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষাবৃত্তি চালু রেখে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান অক্ষুন্ন রাখতে সংগ্রাম এমন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি। এসকল শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষিত নয়, মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি মানুষ গড়ার কারিগরদের মানুষ তৈরি করার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সোনার মানুষ তৈরি করতে হলে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।