দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুন

ইমরান হোসাইন
পাথরঘাটা দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) তথ্যমতে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুন। শুধু ইলিশ নয় বেড়েছে সামুদ্রিক অন্য মাছের পরিমান। তবে ইলিশের সাইজ ছিল আকারে ছোট। সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের রাজস্ব বেড়ে দাড়িয়েছে ১কোটি ৯২ লক্ষ ৯২হাজার ৩২৯ টাকা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুন। মাছ বিক্রির উপর শতকরা হিসেবে ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে রাজস্ব পায় সরকার। এতে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুন। তবে ইলিশের সাইজ আকার ছোট ছিল।

 পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বিপণন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১১৫২.৫৬ মেট্রিকটন ইলিশ ও ১৫৮১.৩৬ মেট্রিকটন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৯৯লক্ষ ৯৬হাজার ৬৫৬ টাকা। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৪৭৫.৯৩ মেট্রিকটন ইলিশ ও ২৩২৪.২১ মেট্রিকটন সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়েছে। সরকার রাজস্ব পেয়েছে  ১কোটি ৯২ লক্ষ ৯২হাজার ৩২৯ টাকা।

 মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের কাঙিক্ষত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘সাসটেইন্যাবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বৃহত প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বিতরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দরিদ্রতা হ্রাস করা হবে। এ ছাড়া ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও এ সম্পদের উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যস্থাপনা প্রকল্প’ মৎস্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২০ সালে। এই প্রকল্পের অধীনে গত অর্থ বছরে পাথরঘাটায় ২৬৫ জন জেলেকে ও মাঝিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ৪৫টি পরিবারকে গরু দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেসহ অন্য পেশাজীবী জাটকা সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়েছে।

 ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা ও প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, অভয়াশ্রম, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ, বিশেষ কম্বিং অপারেশনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে সরকারের। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ এবং জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে উপকূলীয় পাথরঘাটায় জেলেদের জন্য ভিজিএফের আওতায় খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এতে উপজেলায় ১১হাজার ৪শ ১১জন জেলে এ খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন।

 পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হোসাইন বলেন, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে সরকার কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট ছোট থাকায় এক সাথে বেশি ট্রলার ভিড়তে পারেনা। এ কারনে অন্য এলাকার ট্রলারগুলোও এখানে আসেনা। বাজারটি আরোও বড় করা হলে বেশি ট্রলার এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবে। এছাড়াও অবতরণ কেন্দ্রে ৩টি টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপোযোগী, এগুলো সরিয়ে নতুন টয়লেট নির্মান করা জরুরী। তিনি আরো বলেন, সরকারের রাজস্ব টোল কমানো উচিত, তাহলে বেশি মাছ আসবে এ বন্দরে।

 পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার অপু বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণেই দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। উপকূলীয় জেলেরা বেশ ভালই ইলিশ আহরণ করেছে। জাটকা সংরক্ষণ, অভয়াশ্রমে সুষ্ঠ ব্যবস্থপনা এবং প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় এমন সাফল্য এসেছে। তিনি আরো বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কয়েক বছর ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, নৌ বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এরফলে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষা পায়। সরকারের ইলিশ রক্ষায় আইন বাস্তবায়ন হওয়ায় এমন সাফল্য।
Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.