স্টাফ রিপোর্টার
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বরগুনায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বরগুনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালী, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সহযোগিতায় শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও দুদক’র পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক হবিবুর রহমান ও দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো: মাইনুদ্দিন।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে ফেস্টুন ও বেলুন উড়িয়ে ওই একই স্থানে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন করা হয়। এতে অংশ নেন জেলার সরকারি দপ্তর, সংগ্রামসহ বেসরকারি দপ্তর, বরগুনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস্, গার্ল ইন রোভার’র সদস্যবৃন্দ। মানববন্ধন থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে টিআইবি’র ধারণা পত্র বিলি করা হয়।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যলায়ের তৃতীয় তলায় “সুবর্ণজয়ন্তী” হল রুমে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।
এতে সভাপতিত্ব করেন, দুপ্রক’র বরগুনা সভাপতি প্রকৌশলী আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন, দুপ্রক’র সদস্য শরৎ চন্দ্র গোমস্তা।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) এস এম তারেক রহমান, বরগুনা সরকারি কলেজ’র অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মতিউর রহমান, জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলর হোসনেয়ারা চম্পা, সনাক’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আ: রব ফকির, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ: রশিদ মিয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফয়সাল আহমেদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কাওছার হোসেন।
আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন, বরগুনা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ’র শিক্ষক তারিক বিন আনসারী সুমন।
আলোচনায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অংঙ্গীকারে বাংলাদেশে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’কে স্বাধীন ও কার্যকর করার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং এই লক্ষ্যে সরকার বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া নির্বাচনী অঙ্গীকারসমূহের মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাস্তবায়িত হলেও প্রদত্ত অঙ্গীকার ও তা বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনও বাস্তবে অর্থবহ হয় না, কারণ যে সকল আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি পরিবর্তন হয়েছে তার কার্যকরতা নিশ্চিতে ঘাটতি অব্যাহত থাকছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্জিত ইতিবাচক পরিবর্তনকে অর্থহীন করে দেওয়া হয় বিপরীতমুখী সংস্কারের মাধ্যমে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো কোনো ধারা যেমন তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক; তেমনি নিবর্তনমূলক হচ্ছে সরকারি চাকরি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা, যার মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা আরো খর্ব করা হয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামোতে গত প্রায় এক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে এসবের চর্চা ও প্রয়োগের ব্যাপক ঘাটতি। সম্প্রতি দুদক তার অর্পিত দায়িত্ব পালনে লক্ষণীয়ভাবে সচেষ্ট হয়েছে। যদিও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং সরকারের সাথে ঘনিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে দুদক নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে এরূপ দৃষ্টান্ত পাওয়া দূরহ। টেকসই উন্নœয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে বিশেষ করে অভীষ্ট ১৬ এ বিধৃত সুশাসন সহায়ক অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়ে সকল স্তরে স্বচ্ছ, কার্যকর ও দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কাউকে পেছনে না রেখে উন্নয়ন, মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক্-স্বাধীনতা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়সমূহে সকল উন্নয়ন অংশীদের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতি সাধারণ মানুষ করে না বলে উল্লেখ করেন বরং যাদের একটি নির্দিষ্ট পদ ও পদবী আছে তারাই দুর্নীতি করে। তাছাড়া কেবল অর্থ লেনদেনকেই দুর্নীতি বলে না, এর বাইরেও অনিয়ম পন্থায় চলাটাও দুর্নীতির সামিল বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তাই আমাদের সবাইকে মিলে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সমাজের শিক্ষিত মানুষদেরকে আরো সচেতন ও নীরবতা ভেঙ্গে সরব হয়ে দুর্নীতি বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে দুর্নীতিবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল কলেজ পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকে দুর্নীতিবিরোধী প্রবন্ধ অর্ন্তভূক্তি ও চর্চার আহ্বান জানান। দুর্নীীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনায় ১৪ দফা সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। দুর্নীতি মানব না, সইব না ও করব না বলে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্যে উল্লেখ করেন।