গোলাম কিবরিয়াঃ ইউক্রেনে বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে হাদিসুর রহমান আরিফ। বুধবার তার মা-বাবা ও পরিবারের লোকজন রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন ছেলের লাশ নেয়ার জন্য। কিন্তু না, হাদিসুরের লাশ এলো না-এতেই ভেঙে পড়লেন তার মা, বাবা ও ভাই। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে বিমানবন্দর। স্বজনরা ভেবেছিলেন ২৮ নাবিকের সাথে ফিরে আসবে তাদের হাদিসুরের লাশও। এজন্য দুপুরের আগ পর্যন্ত বিমানবন্দরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তারা। যখন দেখলেন, হাদিসুরের লাশ আসেনি, তখনই তার মায়ের আহাজারিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। ‘মোর বাজান গেলা কই। ও বাজান তুমি কোমনে আছো। ও বাবারা তোমরা মোর হাদিস বাবার লাশ লইয়া আইলা না ক্যা। মোর সব শেষ অইয়া গেল। বাবার একটু লাশ দেখতে পারলেই পরানডা জুড়াইত।’ এসব বলে আহাজারি করতে থাকেন হাদিসুরের মা। হাদিসুর তাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার আয়েই সংসারের বেশিরভাগ কাজ চলত। বাবার জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করা হাদিসুরের ভাইবোন ও স্বজনেরা তাই হাদিসুরকে হারিয়ে একটু বেশিই দিশেহারা। প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পৌঁছায়। সেখান থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজটির ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরু হলে যুদ্ধ বেধে যায়। পণ্য নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে তখন ‘চ্যানেল ক্লিয়ার’ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজটি। ওই অবস্থায় গত ২ মার্চ জাহাজে রকেট হামলায় নিহত হন থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান। জাহাজের ব্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আতঙ্ক ও ক্ষোভের মধ্যে পরদিন ৩ মার্চ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্য ২৮ জন নাবিককে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ থেকে নামিয়ে আনা হয়। সেখান থেকে একটি শেল্টার হাউসের বাংকারে ঠাঁই নেন তারা। পরে মলদোভা হয়ে তারা পৌঁছান রোমানিয়ায়। এই পুরোটা সময় উদ্বেগ নিয়ে তাদের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বুধবার তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হলেও রকেট হামলায় নিহত হাদিসুরের পরিবারকে আরো অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। যুদ্ধের মধ্যে জীবিত নাবিকদের বের করে আনা সম্ভব হলেও সব দিক বিবেচনা করে আপাতত ইউক্রেনেই সংরক্ষণ করা হয়েছে থার্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের লাশ। হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার সহায়তা না করলে আমার ছেলের লাশ দেশে আনা সম্ভব নয়। আমি সরকারের কাছে ছেলের লাশটা চাই। এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ সুহৃদ সালেহীন বলেন, নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের লাশ দেশে ফেরত আনতে যে আইনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, তা আমি নিচ্ছি। আশা করা যায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার লাশ ফেরত আসবে।
ছেলের লাশ না পেয়ে বিমানবন্দরে হাদিসুরের মা, বাবা ও ভাইয়ের আহাজারি
Spread the love