বলেশ্বর নদীর হরিণঘাটা থেকে পরিঘাটা পর্যন্ত চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার মহোৎসব



ইমরান হোসাইন


নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার বিভিন্ন পয়েন্ট চলছে রেণু পোনা সংগ্রহের মহোৎসব। জেলেরা একটি চিংড়ি পোনার জন্য ধ্বংস করছে শত শত প্রজাতির পোনা মাছ। প্রকাশ্যে গলদা-বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ করা হলেও মৎস্য বিভাগ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

পাথরঘাটার বলেশ^র নদীর তীরে চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করছে জেলেরা
সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিণঘাটা থেকে পরিঘাটা পর্যন্ত বলেশ^র নদী এলাকা জুড়ে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার মহোৎসব। প্রতিদিন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা মশারি ও ঠেলা জালের মাধ্যমে বাগদা চিংড়ির রেনু শিকার করছে। বিশেষ এক ধরনের সাদা চামচ দিয়ে বাগদা রেণু বাছাই করে অন্য পাত্রে মজুদ করছে। এর সঙ্গে থাকা অন্য প্রজাতির রেণু ও মাছের ডিম নদীর পাড়ে ফেলে পিশিয়ে মারছে। একটি বাগদা রেণু আহরণের জন্য শত শত অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈশাখ-আষাঢ় এ তিন মাস বাগদা রেণুর মৌসুম। এ সময়টা প্রকৃতিগতভাবেই নদীতে উৎপন্ন হয় বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা। পাথরঘাটায় এ পোনার চাহিদা থাকায় কয়েক হাজার জেলে এক ধরনের নিষিদ্ধ নেট জাল নিয়ে নদীতে রেণু নিধনে কাজ করছেন। একজন জেলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ পোনা ধরতে পারে। জেলেরা এ পোনা বলেশ^র নদীর পাড়ের আরতদারদের কাছে দেড় টাকা করে দরে বিক্রি করেন। এর পর আড়াই টাকায় এ পোনা চলে যায় চরদুয়ানী বাজারের বেশ কয়েকটি বড় আরতে। সেখান থেকে প্রতিটি পোনা ৭ থেকে ১০ টাকায় কিনে নেন যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, রামপাল ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকরা।

তিন মাসের এ পেশা অনেকটা লাভজনক হওয়ায় জেলে পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা ঝুঁকে পড়ছেন এ পেশায়। কে কত রেণু আহরণ করতে পারবে এ নিয়ে জেলে পাড়ায় চলছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। অথচ এ ধরনের রেণু পোনা আহরণে কোষ্টগার্ড, নৌ পুলিশ এমন কী জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছিুক একাধিক রেনু শিকারি বলেন, জোয়ারের সময় রেণু পোনাগুলো নদীর তীরে এসে ভিড় জমায়। এ সময়টায় নদীতে নামতে পাড়লে অনেক রেণু শিকার করা যায়। গলদা চিংড়ির পোনা ধরা যে অবৈধ, তা তারা জানেন। কিন্তু বিকল্প আয়ের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই রেনু পোনা শিকার করতে হচ্ছে তাদের। একাধিক রেনু পোনা ব্যবসায়ী জানান, বলেশ^রের বাগদা-গলদা চিংড়ির পোনা অল্প সময়ে বড় হয়ে যায়। এ জন্য যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে বলেশ^রের পোনার কদর বেশি। জেলেদের কাছ থেকে তারা রেনু পোনা কিনে গলদা ও বাগদা চিংড়ির ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় তাদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এর সঙ্গে এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। অবৈধ হলেও কি আর করার। তাছাড়া মৎস বিভাগতো সব জানে।


বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মস্তফা চৌধুরী বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বাহিনীর চোখের সামনেই অবাধে এ সকল মাছ ধরতে দেখা যায়। নদীর পাড়ে অবাধে অসাধু জেলেরা প্রতিদিন রেনু পোনা নিধন করছেন। মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের সকল স্তরের কঠোর নজরদারির পরেও কোনো কাজে আসছে না রেনু পোনা রক্ষায়। এছাড়া বিভিন্ন ফাঁদ পেতে নিধন করায় দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ুন্ত কুমার অপু বলেন, গলদা ও বাগদা পোনা ধরার বন্ধে আমাদের নিয়োমিত আভিযান চলছে। নদীতে চিংড়ির রেণু পোনা ধ্বংস করা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে রেণু পোনা আহরণ করছেন অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কারণে নদী থেকে পোনা ধরা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পোনা আহরণ বন্ধে প্রয়োজনে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.