মো: সানাউল্লাহ্ রিয়াদ
“ভূমির অবক্ষয় ও মরুকরণ রোধ এবং খরা সহনশীলতা অর্জন, চাই আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গীকারের কার্যকর বাস্তবায়ন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় বরগুনায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার সাড়ে ১১টার দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরগুনার আয়োজনে থানাপাড়া ভাড়ানি খালের পাড়ে সনাক, এসিজি ও ইয়েস সদস্যদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে একটি র্যালি করে শহীদ স্মৃতি সড়কে সনাক কার্যালয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
বরগুনা সনাক’র সভাপতি সাংবাদিক মনির হোসেন কামাল এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- সনাক সহ-সভাপতি মো. শামসউদ্দীন খান, সনাক সদস্য ডা. ধীরেন্দ্র নাথ সরদার, আলহাজ্ব আবদুর রব ফকির, মো: হামিদা বেগম, লুৎফর রহমান খান, সুখরঞ্জন শীল, হাজী মো: হারুনর রশীদ, ডা. মনিজা, এড. মো. জাকির হোসেন বাবুল, এসিজি সদস্য (ভূমি) সাংবাদিক মো: সানাউল্লাহ্ রিয়াদ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ১৯ দাবিসহ তিন পাতার একটি ধারণাপত্র পাঠ করেন- এসিজি সদস্য (স্বাস্থ্য) মো: ইমরান হোসাইন।
ধারণাপত্র অনুযায়ী জানা যায়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়। পরিবেশ সুরক্ষা ও বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়নে মরুকরণ এবং ভূমির অবক্ষয় রোধকে সৌদি আরব সরকার তাদের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট বাস্তবায়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সৌদি সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে ৪.১ মিলিয়ন টন কার্বন হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভূমি অবক্ষয়, মরুকরণ ও খরার মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার,‘‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’’ স্লোগানকে সামনে রেখে দিনটি উদ্যাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা , ভূমিক্ষয় ও মরুকরণ প্রক্রিয়া মন্দীভূত করার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীব-বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা, মরুকরণ প্রক্রিয়া মোকাবেলা এবং ভূমির অবক্ষয় রোধের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতেও ভূমির যথার্থ ব্যবহার ও জীব-বৈচিত্র্যের উন্নয়নকে প্রাধ্যান্য দেওয়া হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক পর্যায়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। টিআইবি বিশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলঅ কার্যক্রমে ঘাটতি ও ভূমির অবক্ষয় বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি ও ভূমির অবক্ষয় বৃদ্ধি ও খরা মোকাবেলা ও পানি ব্যবস্থাপনা- সংক্রান্ত কার্যক্রমকে কম অগ্রাধিকার দেওয়াকে দায়ী করছে।
টিআইবি’র ১৯ সুপারিশমালা: তাপমাত্রা হ্রাস এবং খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকার প্রদত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারসমূহের সময়াবদ্ধ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে; পরিবেশ সুরক্ষায় এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৫ অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে; ‘‘ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন ২০২৪’’এর প্রেক্ষাপট অংশে পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য উৎপাদনে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার শব্দগুলোর সঙ্গে ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা’’ উল্লেখ করতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ভূমি পুনরুদ্ধার, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ খরা মোকাবেলায় কৃষি ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই ভূমি ব্যবহার কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে; প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, জলাশয়, বনাঞ্চল, পাহাড় ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন নিউট্রালিটি বা ভূমির অবক্ষয় শূন্যে নামিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে; বনভূমি, জলাভূমি ও কৃষি জমির অবক্ষয় রোধে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে; পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সেই সম্পদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে; জলবায়ু তহবিলের কার্যক্রমে খরা মোকাবেলা ও পানি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে; বন, নদী ও জলাভূমির দখল এবং এর শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে; ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন রোধে পরিবেশ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে হবে; ভূমি ও পানি দূষণ রোধে কৃষি ও মৎস্যচাষে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; পলিথিনসহ শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে অধিপরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে; তাপমাত্রা হ্রাস, খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকারকে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আদিবাসী, উপকূলীয় এবং খরা উপদ্রুত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে গুরুত্ব প্রদান করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে; বাস্তুতন্ত্র, ভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে; পরিবেশ সংরক্ষণ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতসহ স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
আজ বুধবার (৫ জুন) বিকেলে পরিবেশ দিবস পালনের অংশ হিসেবে লোকবেতারে টকশো “আমাদের কথা” প্রচারিত হয়।