এলাকাভিত্তিক দেড় থেকে দু’ঘণ্টা লোডশেডিং


ঢাকা অফিস
বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করা, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখাসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া আটটার মধ্যে দোকানপাট-শপিংমল বন্ধের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময় কমিয়ে আনা, অনলাইনে অফিস করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

সোমবার (১৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে আপনারা জানেন একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের যে প্রভাব পড়ছে সেটা যুদ্ধের চেয়ে কম না। পৃথিবীর উন্নত দেশে লোডশেডিং হচ্ছে, বৃটেনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে, জাপানে হচ্ছে, দেশে অর্থ থাকার পরেও তারা নিজেদের ব্যয়কে সংকোচন করছে।

তিনি বলেন, আমরা আজকে যা আলোচনা করেছি, তার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, আমরা আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের খরচ কম হয়, সেই পর্যায়ে, যেটা সহনশীল হয়, সেই পর্যায়ে নিয়ে আসা।

ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ডিজেলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম। তাতে অনেক টাকা সশ্রয় হবে।

এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং চালুর বিষয়ে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, বিদ্যুতের যে ঘাটতি আমরা সবাই সেটা ভাগ করে নেব। তাতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোথাও দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুযোর্গপূর্ণ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, কীভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো যায় এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আপনারা আগেও শুনেছেন দোকানপাট বন্ধ থাকবে আটটার পরে। যেখানে এসি ব্যবহার করা হয়। সেখানে ২৪ ডিগ্রির ওপরে রাখতে হবে। মসজিদে মুসল্লি যারা আপাতত তারা এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। আমাদের শপিংমল দোকানপাট সব বন্ধ থাকবে। এখানে যারা নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।

অফিস সময় কমানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছি। আমাদের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। সরকারি অফিসের সময় কিছু কমিয়ে সেখানে আমরা কিছু বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারি। যেসব সভায় হয়, এই সভাগুলো আমরা যদি অনলাইনে করি তাহলে আমাদের সবার সময়ও বাঁচবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিও সাশ্রয় হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বিষয়টা হলো আমাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হবে। সাশ্রয় করার জন্য আমরা ঠিক করেছি এলাকাভিত্তিক- আগে থেকে গ্রাহকদের জানিয়ে দেব সে অনুপাতে আমরা লোডশেডিংয়ে যাচ্ছি। এটা আমাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য।

কবে থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা আশা করছি কালকে থেকে আমরা শুরু করবো। আমরা ধীরে ধীরে এটাকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবো। আমরা দেখবো প্রথম সপ্তাহে কী রকম ভাবে প্রভাব ফেলছে কোন এলাকাতে।

অনলাইন অফিস করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের অফিসগুলো ভার্চ্যুয়ালি করলে সব থেকে বেশি আমাদের সাশ্রয় হবে। আশা করছি সবগুলো আমরা ভার্চ্যুয়ালি করবো।

গাড়িতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গাড়িতে যাতে তেল কম ব্যবহার করা হয়, সেটার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যেসব গ্রাহক আছে আমাদের সহযোগিতা করবেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী কাল থেকে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

অফিসের সময় কমানো বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, অফিস আওয়ারটা আমার জ্বালানির ওপরে কীভাবে প্রভাব ফেলবে সেটা বিশ্লেষণ করার পরে সিদ্ধান্ত হবে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

আটটার মধ্যে দোকানপাট-শপিং মল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে মুখ্য সচিব বলেন, দোকান পাট- আগে থেকে নিয়ম আছে আট থেকে বন্ধ করা। বিভিন্ন জায়গা দেখা গেছে আটটার পরেও খোলা রেখেছে। আমরা বলবৎ আইনটাকে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বলেছি। সেটা হলে আমাদের অনেক সাশ্রয় হবে।

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.