স্টাফ রিপোর্টার
প্রবাহমান স্রোতধারা পদ্মার বুকে থৈ থৈ জল। নৌযানগুলো এখনও চলছে। দীর্ঘদিনের এ পথের যাত্রীদের ভয় নিয়ে পার হতে হত ছোট ছোট লঞ্চ কিংবা স্পীড বোটে। বহু নৌ দুর্ঘনার সাক্ষী এই পদ্মা।
সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়তেই মৃদু অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করে পদ্মার বুকে। আর এই মৃদু অন্ধকার একটু গাঢ় হতেই জ্বলে উঠে আলো! স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে সংযোজন করা বাতি জ্বলে উঠতেই বর্ণিল রেখার মতো পদ্মার পাড়ে যেন সৃষ্টি হয় ‘ছায়াপথ’! যে ‘পথ’ স্বপ্ন জয়ের; দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনার দ্বার এই পদ্মা সেতু!
গত ৪ জুন প্রথম বাতি জ্বালানো হয় পদ্মা সেতুতে। তখন সেতুর ২৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়। তবে গত সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় মাওয়া প্রান্ত থেকে মূল সেতু পর্যন্ত একযোগে ২০৭টি লাইট জ্বালানো হয়। পদ্মা সেতুতে জ্বলে ওঠা আলোর মুগ্ধতা সাধারণ মানুষের মনে এমন ভাবনাই জাগিয়ে তোলে। পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিনের মতোই পদ্মার নদীশাসন বাঁধে দর্শনার্থীদের ভিড়। সেতুতে জ্বলে ওঠা আলোতে যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে। এ যেন পদ্মার বুকে স্বপ্ন জয়ের প্রদীপ!
সরেজমিনে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের পদ্মার নদীশাসন বাঁধ, টোলপ্লাজাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সেতু নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস। আগামী ২৫ তারিখ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুর দ্বার। পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিশেষ করে পদ্মার চরাঞ্চল শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা, শিবচরের পদ্মাবেস্টিত চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর চেহারা পাল্টে গেছে। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন কমপক্ষে দেড় ডজন বাজার। পুরোনো হাট-বাজারগুলোতে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। ফলে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই অঞ্চলে পর্যায়ক্রম গড়ে উঠবে নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাড়বে কর্মসংস্থান। কৃষিপণ্য নিয়ে যখন-তখন বিভিন্ন স্থানে সহজেই যেতে পারবেন কৃষকরা। ফলে উন্নত জীবনের হাতছানি দেখছেন পদ্মাপাড়ের মানুষেরা।
পদ্মা সেতুতে বাতি জ্বালানোয় এক অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এই আলো দেখে মুগ্ধ পদ্মাপাড়ের গ্রামবাসী, চরের মানুষরা। তাদের অভিমত, এই আলো অবহেলিত জনপদের উন্নয়নের প্রতীক!
পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা মো. ইসমাইল জানান, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। সন্ধ্যার পর সেতুতে আলো জ্বললে ভিন্ন রকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে পদ্মাপাড়ে। আমরা এখন দিন গুনছি সেতু চালু হবার। আমাদের কাছে ২৫ জুন হবে স্মরণীয় দিন!’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। মূলসেতুতে রয়েছে ৩২৮টি ল্যাম্পপোস্ট। জাজিরা প্রান্তের উড়ালপথে (ভায়াডাক্ট) ৪৬টি এবং মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে বসানো হয়েছে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম পিলার থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন সংযুক্ত করে দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং জোনাল অফিস (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি)। আর শরীয়তপুরে জাজিরা নাওডোবা প্রান্ত থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার সেতুতে অর্ধেক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে বাতি জ্বালানো হয়। এ নিয়ে গত ৭ দিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি বাতি জ্বালানোর মাধ্যমে স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মাওয়া প্রান্তের পশ্চিম পাশের ভায়াডাক্ট থেকে মূল সেতু পর্যন্ত ২০৭টি লাইট পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানো হয়েছে।