স্টাফ রিপোর্টার
সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সোহানার বাসায় যাওয়া-আসা ছিল রঞ্জুর।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আধা ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রয়োজনে পুলিশ তাকে আবারও ডেকে নেবেন। এ অবস্থায় রঞ্জুকে ঢাকা না ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, তুলির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের স্বার্থেই সাংবাদিক রঞ্জুকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নিহত ওই সাংবাদিকের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
সূত্র জানায়, সোহানার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ওই বাসার কেয়ারটেকারের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেলের নম্বর পায় পুলিশ। যে মোটারসাইকেলে করে একজনের যাওয়া-আসা ছিল সোহানার বাসায়। পরে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নম্বরটি (৫১৫৬০৭) যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিআরটিএতে পাঠানো হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিআরটিএ থেকে সরবরাহ করা দুটি নম্বর (ঢাকা মেট্টো হ-৫১৫৬০৭ ও ঢাকা মেট্টো ল-৫১৫৬০৭) পায় পুলিশ। দুজন ব্যক্তির নাম-ঠিকানাও জানা যায়। সেই নম্বর ও নাম ধরে ওই বাসার কেয়ারটেকারের শরণাপন্ন হয় পুলিশ।
কেয়ারটেকার আজিমুদ্দিন ঢাকা মেট্টো ল-৫১৫৬০৭ নম্বরের মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করে, যার মালিক সাংবাদিক রঞ্জু। রঞ্জুকে কেয়ারটেকারের সামনে আনা হলে কেয়ারটেকার তাকে শনাক্ত করেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ জানায়, রঞ্জুর কাছ থেকে ফোন জব্দ করা হয়েছে। সেখানে সোহানার সঙ্গে বেশ কিছু কথোপকথন পাওয়া গেছে। কিছু কথোপকথন তিনি ডিলেট করে দিয়েছেন। সেসব উদ্ধারে ফোনটি ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
সবশেষ মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তুলির বাসায় যান রঞ্জু। সেখান থেকে বের হওয়ার পর একাধিকবার মোবাইলে কল করেছেন সোহানা। রঞ্জু ওইদিন কল ধরেননি এমনকি কল ব্যাকও করেননি। এরপর সোহানা কিছু একটা লিখে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, যা রঞ্জু তার মোবাইল থেকে ডিলেট করে দিয়েছেন। কী মেসেজ দিয়েছিলেন তা জানতে ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বুধবার (১৩ জুলাই) রায়েরবাজারের মিতালী রোডের বাসা থেকে সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তুলিকে ফোনে না পেয়ে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবি নন্দিতা বাসায় গিয়ে দরজায় নক করেন। কিন্তু ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে দারোয়ানের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে তুলিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি হাজারীবাগ থানাকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন সোহানা তুলি। তিনি দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ করছেন। ২০২১ সালের মে মাসে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের চাকরি ছাড়েন। এরপর কিছুদিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সোহানা। সম্প্রতি একটি অনলাইন শপ খুলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।