এ নগ্ন জনপদ আমার নয়

পাতায় – খাতায় লাভ-ক্ষতি, সুদকষা ছাড়া নেই কোন সমাধান।
মূল্যবোধ, মানবতা, নীতি, ধর্ম বদলে আসে অর্থকরী পাঠ্যক্রম।


হিমেল মাঘের রাতে ফুটপাতে ঘুমন্ত শিশুর
বুকের চাদর নিতে পারে যারা,
তাদের বোধের মতো মরে গেছে মানুষের বোধ।
কোথাও আলো নেই।


এই ম্রিয়মাণ বিমূঢ় বোধের কাছে
প্রাচীন লিপির মতো অপাঠ্য সত্যের বাণী।
কলমির ঝোপের ন্যায় গড়ে ওঠে অনাথ আশ্রম
আর দাতব্য সেবার অন্তরালে ডাকাতের ডেরা।
চারিপাশে লোভে, লাভে বহমান অন্ধ গড্ডালিকা,
কোথাও তার দেখিনাকো বিবেকের রোধ।

জানি, কত নক্ষত্রে ভরা আকাশ!
উজ্জ্বল আলোয় ঝলমলে রূপালী নক্ষত্র।
তবু দূরে, অনেক অনেক দূরে তারা।
সে সবের আলো আসে নাকো পৃথিবীতে।
ভালো মানুষেরা দূরের নক্ষত্রের মতো সরে গেছে দূরে;
অথবা, তাদের মরে গেছে মন।
ঘন জঙ্গলের রাতের মতোন অন্ধকারে ঢেকেছে সমাজ।


চারিদিকে তার শেয়ালের, শুয়োরের, হায়েনার, নেকড়ের, বা আরও কোন
পৈশাচিক নাক খোঁজে উষ্ণ কলিজার ঘ্রাণ।
ক্যান্সারের যন্ত্রনায় মধ্য রজনীতে নির্ঘুম-নিথর দেহ;
তার পাশে নিরুপায় পিতা বসে থাকেন যেমন,
তেমনি অসহায় আজ মানুষের বিবেক ও বোধ।

অথর্ব লোকেরা আজ জগদ্দল পাথরের মতো
বসে সভাপতি পদে।
মাননীয় সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত সুধীবৃন্দ- তোমাদের কাউকে চিনি না।
যাদের চিনি ও জানি,
যাদেরকে ভক্তি করি,
যাদেরকে শ্রদ্ধা করি,
তাঁরা দর্শক সারিতে সোনালী ধানের শীষের মতোন ন্যুব্জ।


বিচারহীন কৃষ্টির অযাচিত প্রশংসার সূচ-কাঠি
অন্ধ করে দেয় প্রতিভার চোখ।
আজিকে কোথাও আলো নেই।
আজিকে কোথাও মায়ের চোখ নেই,
পিতার চোখ নেই, ভাইয়ের চোখ নেই, বোনের চোখ নেই।


এখন মানুষের উপরে বসানো ড্রোনের চোখ, গোয়েন্দা স্যাটেলাইট।
বিন্দু বিশ্বাসহীন বিবশ সমাজ দেহে নেই কোন বোধ।
কী নির্লজ্জভাবে খুলে পড়েছে তার পোশাক!
এই নগ্ন জনপদে যিনি কাপড় পরিহিত, তারইতো লজ্জা।


আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম এইসব কদাচার।
এই নগ্ন জনপদ আমার নয়।
আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম এ সুধী সমাজ।

কবি: মাহবুব হাসান জুয়েল

প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)

বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ।

(ছন্দ- অক্ষরবৃত্ত)

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.