“বরগুনার পাথরঘাটা” ভুয়া তালিকা করে এতিমের টাকা লোপাট

প্রতীকী ছবি


ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা


বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ১৮টি এতিমখানায় কাগজে-কলমে ৪১৮ জন এতিম দেখালেও বাস্তবে তা নেই। অনেক জায়গায় কেবল নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড, একজন এতিমও নেই। গ্রামের মাদ্রসা ছাত্রদের বাবা-মাকে মৃত্যু দেখিয়ে ভুয়া এতিম বানিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এতিমখানার ব্যবস্থাপনা কমিটি।

   পাথরঘাটা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী পাথরঘাটা উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড ১৮টি এতিমখানায় ২১৮ জন এতিমের অনুকুলে ৫২ লক্ষ ৩২হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্ধ এখনও দেয়া হয়নি। তথ্যমতে, ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অনুকূলে এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী এতিম অর্থাৎ পিতৃহীন বা পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র শিশুর ৫০ শতাংশ বরাদ্দের আওতায় আসবে। অর্থাৎ একটি এতিমখানায় যদি ১০০ শিক্ষার্থী থাকে তবে ৫০ জনের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। একজন এতিমকে মাসে দুই হাজার টাকা করে বছরে ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিমাসে খাবার বাবদ ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০, ওষুধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০ বরাদ্দ দেয়া হয়।

  উপজেলায় ১৮টি এতিমখানায় কাগজে-কলমে তালিকা দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করলেও বাস্তবে অধিকাংশ এতিমখানার চিত্র ভিন্ন। এতিম নয় এমন শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে এতিমখানার পরিচালকরা বরাদ্দের টাকা পকেটে পুরছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গেছে। সমাজসেবা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতি বছর এসব এতিমখানার নামে নানা কৌশলে প্রতারক চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

  সরকারের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পাওয়া তালিকাভুক্ত কয়েকটি এতিমখানায় সরেজমিনে দেখাযায়, কাগজে-কলমে যে এতিম দেখানো হয়েছে তার তিনভাগের একভাগ এতিমও নেই। এর মধ্য কালমেঘা ইউনিয়নের খায়রুননেছা এতিমখানায় ২৪ জন এতিমের বিপরীতে ৫লাখ ৭৬ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও বাস্তবে এতিম রয়েছে ১২ জন। আমড়াতলা রায়হানিয়া শিশু সদনে ২২ জন এতিমের বিপরীতে ৫লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, বাস্তবে এতিম রয়েছে ৯ জন। আনোয়ারা শিশু সদনে ৪ জন এতিমের বিপরীতে ৯৬হাজার টাকা টাকা উত্তোলন করা হয়, বাস্তবে এতিম রয়েছে ১জন। উপজেলায় একই রকম চিত্র প্রায় এতিমখানা ও শিশু সদনের। এছারাও মুন্সিগঞ্জ নেছারিয়া মুসলিম এতিমখানা এতিমখানা ৮ জন এতিমের বিপরীতে ১লাখ ৯২ হাজার টাকা। মধ্য কালমেঘা ছাদেকিয়া মুসলিম এতিমখানায় ৪ জন এতিমের বিপরীতে ৯৬ হাজার টাকা, দক্ষিণ কুপদোন এতিমখানা ৬ জন এতিমের বিপরীতে ১লাখ ৪৪ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এ এতিমখানা গুলোর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

  সিনিয়র সাংবাদিক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, প্রকৃত এতিমদের তালিকা করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর যদি এতিমখানা গুলোতে বেশি মনিটরিং করে তাহলে অর্থ লোপাটের সুযোগ থাকেনা। অর্থ লোপাটের পিছেনে সমাজসেবার কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। ভুয়া তালিকা করে যেসব এতিমখানায় টাকা উত্তোলন করা হয় তাদের বরাদ্ধ বাতিল করে প্রশাসনের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

  বরগুনা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, এ বিষয় আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। যেসব এতিমখানা গুলো বন্ধ রয়েছে তাদের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বন্ধ করতে ও চলমান এতিমখানা গুলোর এতিমের তালিকা অনুযায়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সুপারিশ সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। যেসব এতিমখানা বন্ধ রয়েছে তাদের অনুদান বাতিল করা হবে। এসব অনিয়ম বন্ধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

   বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রকৃত এতিম ছারা কেউ যেন বরাদ্ধ না পায় সে বিষয় আমি ইতোমধ্যে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড এতিমখানা গুলোতে জরিপ করে প্রকৃত এতিমদের তালিকা করতে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত এতিমদের বরাদ্ধ দেয়া হবে, যে সব এতিমখানাগুলো বন্ধ রয়েছে তাদের বরাদ্ধ বাতিল করা হবে। যারা ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.