প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাবেন বৃদ্ধা আলেয়া

স্টাফ রিপোর্টার

অবশেষে মাথা গোঁজার ঠাঁই হচ্ছে ৩০ বছর ধরে ব্রিজের নিচে বসবাস করা বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের (৭০)। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর ও জমি পাচ্ছেন। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই আলেয়াকে জমি ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে।

জানা যায়, বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়িও ছিল একই গ্রামে। ৩০-৩২ বছর আগে সংসারে অভাব অনটনের কারণে মায়ের সঙ্গে বরগুনা শহরে পাড়ি জমান আলেয়া। তখন থেকেই শুরু হয় তার আশ্রয়হীন জীবন। প্রথমে বরগুনার মাছ বাজার, সবজি বাজারে ভাসমানভাবে রাত্রিযাপন করার পর ভাড়ানী খালের বাজার ব্রিজের নিচে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। এখানেই কেটে গেছে ৩০-৩২ বছর।

ব্রিজের নিচের খুপরি ঘরেই জন্ম দিয়েছেন ৮ ছেলে ও ১ মেয়েকে। যাদের সবাইকে কেড়ে নিয়েছে ভাড়ানী খাল। গৃহহীন-ভূমিহীন আলেয়ার অসহায়ত্ব ও মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। পরে আলেয়ার জন্য খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৩ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলেয়া বেগম বলেন, ৩০-৩২ বছর কাডাইছি ব্রিজের তলে, খালের পেটে দিছি নয়ডা গুরাগারা। এত কিছুর পর হপায় একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইলাম। শেখ হাসিনা আমার মা, হে আমারে ঘর দেছে। তার লইগ্গা খোদার দরবারে প্রাণ ভইরা দোয়া করমু।

আলেয়া আরও বলেন, বাপ-মায়ের অভাবের সংসারে বড় হইছি। বিয়ার পর স্বামীও হালাইয়া থুইয়া গেছে। বড় পোলা বউ বাচ্চা লইয়া আলাদা থাহে। জীবনেও কহনো ঈদের উপহার পাই নাই। তয় এবার আমার লইয়া সবচেয়ে দাবি ঈদ উপহার পাইলাম। বয়স ৭০ ছাড়াইছে, বাচমুও বা আর কয়দিন। তবুও যদি বাকিডা সময় শান্তিতে রাহে আল্লায়।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ব্রিজের নিচে থাকা আলেয়ার বিষয়টি নজরে এলে আমরা তাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনি। আগামীকাল তাকে ঘরটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল বেলা ১১ টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনার খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে আমাদের সব প্রস্তুুতি সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বরগুনার ছয় উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৩২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৯৩টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭২৫টি ঘরের মধ্যে ৪১১টি ঘরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২৬ এপ্রিল সদর উপজেলার খাজুরতলায় ৫০টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। এখানকার সুবিধাভোগীদের মধ্যে রয়েছে ভিক্ষুক, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিকভাবে অক্ষম, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিসহ হিন্দু পরিবার।

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.