খাদিমুল বাশার জয়-
১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনবদ্য নেতৃত্বে সম্মোহিত – একতাবদ্ধ বাঙালি জাতি কর্তৃক সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো, সে রাষ্ট্রের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। সেদিন বাঙালি জাতির ললাটে কলঙ্ক তিলকের সৃষ্টি হয়। সূচনা হয় বাঙালি জাতির বিপর্যয়ের। দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা’র সাথে দেশ ও জাতি সর্বশান্ত হলো। পৃথিবীর যেকোন শোক তাঁদের শোকের কাছে ম্লান হয়ে গেলো।
১৭ মে, ১৯৮১। গ্রীক পুরানের পাখির মতো নির্বাসনের অশ্রু পেরিয়ে পিতার শ্যামল মাটিতে ফিরে এলেন শোষিত বঞ্চিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আজকের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। উদয়ের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। শুরু হলো গণতন্ত্রের সংগ্রাম- গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন- সামরিক নেতৃত্বে কুঠারাঘাত।
এর পরবর্তী চার দশকের বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীক ইতিহাস। প্রায় চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে তিনি চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বিরোধী নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন অগণিত দিন, কারাবরণ করেছেন অসংখ্যবার। জনহিতৈষী পদক্ষেপ, জনদাবির প্রতিষ্ঠা, ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, উন্নত রাষ্ট্রচিন্তা ও বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, স্বাধীনতার চেতনা উজ্জীবিত করা, মুক্তচিন্তার মানুষদের স্বাধীনতার স্বাদে অবগাহন করার সুযোগ দান, বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে গত চার দশকে পদচারণা ছিলো না জননেত্রী শেখ হাসিনা’র।
তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বাঙালির ঐক্যবদ্ধ চেতনার রূপকার – বটবৃক্ষ – ধৈর্য ও সহনশীলতার শ্রেষ্ঠ স্বাক্ষর তিনি। পিতার চরিত্রের উদারতা ও বিশালতা তাঁর স্বভাব। জননেত্রীর সেবা থেকে কেউ বাদ পড়ে না। সব্যসাচী অসুস্থ কবি সৈয়দ শামসুল হককে দেখতে যেমন তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। ঠিক তেমনিভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও পায়রা নদীর কোলঘেঁষা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু’র ডাকযোগে প্রেরিত পত্রের উত্তর দিতে ভুলেননি। তিনি আশ্বাস দিয়ে শীর্ষেন্দু’কে লিখেন, ‘পায়রা নদীর উপরে সেতু নির্মিত হবে’। এভাবেই ব্যক্তি শেখ হাসিনা, রাজনীতিক শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী হয়ে নয়, সারা দেশের, সারা বিশ্বের নেত্রী হিসেবে।
১৯৭১ ও ১৯৭৫ এর ঘাতকচক্র জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী ছদ্মবেশে বারবার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় জননেত্রীকে নৃশংস হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ১৫ আগষ্ট জননেত্রী ও তাঁর একমাত্র বোন ঘাতকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পান। এরপর চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ১৯৮৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে বেপরোয়া পুলিশের গুলি, রমনার বটমূল থেকে উদীচী সংগীত মেলা, কোটালিপাড়ায় গণজমায়েত থেকে এবং ২০০৪ এর ২১ আগস্ট ঘুরে ফিরে পাক এজেন্ট মুফতি হান্নান, ফারুক রশীদ, তারেক বাবর গং, ছদ্মবেশী শত্রুরা প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আড়ালে থেকে বারবার তাক করেছে শেখ হাসিনা এবং তার নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদেরকে। আহসানউল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমানসহ অসংখ্য নিবেদিতপ্রাণ নেতা- কর্মী প্রাণ দিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তবুও ঘাতকরা থামাতে পারেনি দেশপ্রেমিক অকুতোভয় জননেত্রী শেখ হাসিনা’র দৃপ্ত পদচারণাকে।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ২৮ সেপ্টেম্বর সমাগত। তাঁর জন্মদিনে তিনি দীর্ঘায়ু হোন, এই কামনা দেশের মানুষের। তিনি বাঙালির ঐক্যবদ্ধ চেতনার প্রতীক এবং পুরো দেশের প্রতিনিধি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশকে তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। তিনি ভালো থাকলে, ভালো থাকবে দেশ, ভালো থাকবে দেশের মানুষ।
জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখকঃ- কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।