একদিকে শাস্তি অন্যদিকে ধন্যবাদে ভাসছে বরগুনার অ্যাডিশনাল এসপি মহরম আলী

স্টাফ রিপোর্টার

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছিলাম, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওখানে এত পুলিশ আসছে যে সেখানে কমান্ড শোনার মতো কেউ ছিল না। পুলিশ সদস্য একজন আরেকজনের কথাই শুনছিলো না।

সোমবার (১৫ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে শোক দিবসের এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

প্রেসক্লাবের আয়োজনে শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

সংবাদ সম্মেলনে শম্ভু আরও বলেন, আজ দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ওখানে পুলিশ কর্মকর্তা মহররম ছিলেন। তিনি যেসব কমান্ড করেছেন, তা তিনি করতে পারেন না। তিনি অনেক ভুল করেছেন। আমরা চাই তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখুক এবং তাকে বিচারের আওতায় আনুক।

আমি যেখানে উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শোনেননি। ইতিমধ্যে বিষয়টি দেখার জন্য ডিআইজি সাহেব অ্যাডিশনাল জিআইজিকে পাঠিয়েছেন তদন্ত করতে।

সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শ ছাড়াই জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের আগে কাউন্সিল বাধ্যতামূলক, এ কমিটি দেওয়ার আগে সেটাও করা হয়নি। আপনারা জানেন যে ছাত্রলীগ করতে হলে যে পাঁচটি শর্তের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে শর্তগুলো কমিটিতে মানা হয়নি। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার অপেক্ষা করছি।

অন্যদিকে, শোক দিবসের আলোচনা শেষে রাত সাড়ে দশটার দিকে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের শোক রেলিতে দুষ্কৃতকারীদের হামলার প্রতিবাদে বরগুনা প্রেসক্লাবের হলরুমে জেলা ছাত্রলীগের এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল কবির রেজা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা।

তিনি বলেন, আমরা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শোক রেলিতে অংশগ্রহণ করি। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অতিক্রম করলে একাডেমীর তিন তলা থেকে আমাদের উদ্দেশ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আমরা না দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। কে বা কারা মেরেছে তা আমরা দেখিনি। এই ইট পাটকেল ছুড়তে গিয়ে পুলিশের গাড়ির গ্লাস ভাঙলে আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটায় পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরো বলেন, খুনি মোস্তাকের মতো বিশ্বাসঘাতকরা ছাত্রলীগে অবস্থান করছে। এজন্যই আজ শোক দিবসে উত্তপ্তকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

মাননীয় সংসদ সদস্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছে, অন্যদিকে আপনারা পুলিশকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, এমন সাংঘর্ষিক বক্তব্যের উত্তর জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান। 

জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যারা অবস্থান করছিল, তারা কারা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিকুর রহমান ইমরান বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থানরত মার খাওয়া কোন ব্যক্তি আমাদের ছাত্রলীগের নয়। 

বরগুনা জেলায় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা, প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় পুলিশ কর্মকর্তা মহরম আলীর শাস্তির দাবিতে সংসদ সদস্য অন্যদিকে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির ধন্যবাদ জানানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। 

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি ভবনে আটকে গণহারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পেটায় পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলানায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।

এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

Spread the love
       
 
 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published.