হাফেজ মুফতি জাহিদুল ইসলাম বেলাল
জিলহজের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা মতে, এ দশ দিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম দিন।
এ দিনগুলোতে ইবাদত ও আমলের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখানে বিশেষ কয়টি আমলের কথা তুলে ধরা হলো।
কোরবানি করা : এ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল কোরবানি, যা ১০, ১১ বা ১২ তারিখে সম্পন্ন করতে হয়। এবং তা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর ওয়াজিব—যিনি সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী। মহানবী (সা.) সরাসরি কোরবানির ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো। ’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)
রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। ’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৫৬৬)
আর যাদের ওপর ওয়াজিব হয়নি, তারাও চাইলে সুন্নত হিসেবে কোরবানি করতে পারবে।
বেশি বেশি নেক আমল করা : এ মাসের প্রথম ১০ দিনের যেকোনো নেক আমল আল্লাহর অনেক প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
তাই প্রতিটি মুহূর্তে কোনো না কোনো নেক আমল করতে থাকা উচিত। যে কাজই করি তা যেন হয় ইহকালীন বা পরকালীন কোনো কল্যাণে। পাশাপাশি গুনাহ থেকে বিরত থাকাও বিশেষভাবে জরুরি।
প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা : জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। এর প্রতিটি রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য। এবং প্রথম ১০ রাতে ইবাদত করা উত্তম। এর প্রতিটি রাত লাইলাতুল কদর সমতুল্য। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো। আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো। ’ (তিরমিজি : ১/১৫৮)
পুরো ৯ দিন রোজা রাখা সম্ভব না হলে যত দিন রোজা রাখা সম্ভব তত দিন রাখা যেতে পারে। আর পুরো ১০ রাতে ইবাদত করা সম্ভব না হলে যত রাতে ইবাদত করা সম্ভব তত রাতে ইবাদত করা যেতে পারে। এতেও সাওয়াব পাওয়া যাবে।
বিশেষত আরাফার দিন রোজা রাখা : আরাফার দিন তথা ৯ জিলহজ রোজা রাখলে দুই বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই এ দিন রোজা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
অতএব যে এলাকায় যখন জিলহজের ৯ তারিখ হবে সে এলাকায় তখন রোজা রাখলে এ ফজিলত লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।
নখ-চুল ইত্যাদি না কাটা : যারা কোরবানি করার ইচ্ছা করবে তাদের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত নখ-চুল ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন জিলহজের প্রথম দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি করবে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭)
তবে কোরবানি করতে অক্ষম ব্যক্তি ঈদের পর নখ-চুল ইত্যাদি কাটলে তার পূর্ণ একটি কোরবানির সওয়াবের কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৯)
এমনকি এ সময় বাচ্চাদের নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো। অতএব জিলহজ আগমনের আগেই নখ-চুল ইত্যাদি কেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়ল
লেখকঃ ইমাম ও খতিব, বরগুনা কালেক্টরেট (ডিসি কোর্ট) জামে মসজিদ বরগুনা।