মো: সানাউল্লাহ্ রিয়াদ :
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মানুষের জীবনধারণের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো খাদ্য। বর্তমানে মানুষের জীবনে বহুবিধ সমস্যার মধ্যে একটি হল ভেজাল খাদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। তাই প্রয়োজন মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের।
আর নিরাপদ খাদ্য ও দ্রব্যমূল্যের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে রমজানের একদিন আগেই সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে বরগুনা জেলা প্রশাসন পরিচালনা শুরু করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ফ্রিজে রক্তের সংমিশ্রণে রাখা শুকনো খাবার, মুরগি ফ্রাই করে ফ্রিজারের মাধ্যমে অধিক সময় সংরক্ষণ করায় ফাঙ্গাস সৃষ্টি হওয়ায় গাজী কিচেনকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে জব্দকৃত অস্বাস্থ্যকর খাবার বিনষ্ট করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চত করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতের হাকিম (বিচারক) বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট জাহিদুর রহমান। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ^াস, জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর (ডিএসআই) মহিউদ্দিন আল মাসুদ, উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ খলিলুর রহমান। এসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন বরগুনা সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) বারেক।
ভ্রাম্যমান আদালতের বিজ্ঞ বিচারক গাজী কিচেনের উপরে আনিত অভিযোগ এর বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এর ম্যানেজার মোঃ রাসেল হাওলাদারকে যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করেন। সঠিক কোন যুক্তি উপস্থাপন না করতে পারায় গাজী কিচেনকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৩ ধারায় বিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ২৭২ ধারা অনুযায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দূষিত খাবার ও পানীয় বিক্রি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ধারা ২৫(গ) অনুসারে খাদ্যে ভেজালকে মৃত্যুদন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনিরাপদ খাদ্য বা ভেজাল খাদ্যের বিষয়টি ‘ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্যক্রম’ হিসেবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ আইনে খাদ্যপণ্যে ভেজাল মিশ্রণ একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কারাদন্ড ও জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে। জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ আইন প্রণীত হয়েছে ২০১৩ সালে। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘নিরাপদ খাদ্য’ বলতে প্রত্যাশিত ব্যবহার ও উপযোগিতা অনুযায়ী মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত আহার্য বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া বিএসটিআই আইন ২০১৮ এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২১ নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানে আইনি কাঠামোর অংশ।
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-তে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থ্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধিনিষেধের উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার পরিহার; তেজস্ক্রিয়, ভারী ধাতু ইত্যাদির মাত্রাতারিক্ত ব্যবহার রোধ; ভেজাল খাদ্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিপণন ইত্যাদি পরিহার; নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন না করা; খাদ্য সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়াকরণ সহায়ক দ্রব্যের ব্যবহার না করা; শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত তেল, বর্জ্য, ভেজাল বা দূষণকারী দ্রব্য ইত্যাদি খাদ্য স্থাপনায় না রাখা; মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ না রাখা; বৃদ্ধি প্রবর্ধক, কীটনাশক, বালাইনাশক বা ওষুধের অবশিষ্টাংশ, অণুজীব, ইত্যাদির ব্যবহার পরিহার; বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকৃত খাদ্য, জৈব খাদ্য, ব্যবহারিক খাদ্য, স্বত্বাধিকারী খাদ্য ইত্যাদি সরবরাহ বা বিক্রয় না করা; খাদ্য মোড়কীকরণ ও লেবেলিং পরিবর্তন না করা; মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয় ইত্যাদি পরিহার; রোগাক্রান্ত বা পচা মৎস্য, মাংস, দুগ্ধ বিক্রয় না করা; হোটেল রেস্তোরাঁ বা ভোজনস্থলের পরিবেশনসেবা দ্বারা ভোক্তার স্বাস্থ্যহানি না ঘটানো; ছোঁয়াচে ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত না করা; নকল খাদ্য উৎপাদন, বিক্রয় ইত্যাদি পরিহার; অনিবন্ধিত অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয় না করা; কর্তৃপক্ষ বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা প্রভৃতি।