সিনিয়র রিপোর্টার :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিয়েছে। এটি আগামী ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এবিষয়ে বৃহস্পতিবার (১১ মে) বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে কার্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শুভ্রা দাস আবহাওয়া সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত আজ (১১ মে) এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানান- আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ১১.২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঘূর্ণিঝড় মোখা’য় পরিণত হয়েছে। এটি আজ (১১ মে ২০২৩) সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে আগামীকাল (১২ মে ২০২৩) তারিখ সকাল পর্যন্ত উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমাসয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম কক্সবাজার মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে এক (০১) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই (০২) নম্বর (পুনঃ) দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ দেশের অন্যান্য সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর হুশিয়ারি সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান – ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় বরগুনায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলীতে ১১১টি, তালতলীতে ৫৩টি, পাথরঘাটায় ১২৪টি, বেতাগীতে ১১৪টি এবং বামনায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া জেলায় ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ কার্য নগদ খাতে দশ লক্ষ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ২শত বান্ডিল ঢেউটিন এবং ঢেউটিনের সাথে গৃহ নির্মাণ ব্যয় বাবদ ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’র মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বরগুনা উপকূলীয় জেলা হওয়ায় আমরা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বরগুনা আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তা সংস্কারের জন্য কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র’র মোবাইল নম্বর- ০১৭০০৭১৬৭২৫।